কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান (দুই দিন তিন রাতের জন্য)

কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান (দুই দিন তিন রাতের জন্য)

কক্সবাজার সি বিচ দেখতে দেখতে যারা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন তাদের জন্য এই সেনসেশনাল ডেস্টিনেশন। যারা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত নিজ চোখে দেখতে চান তাদের জন্য এই ট্যুর।যারা শুটকি কিভাবে প্রসেসিং করে দেখতে চান তারা দেখতে পাবেন কুয়াকাটায় গেলে, শুটকি পল্লী নামে আলাদা একটা পল্লী আছে এইখানে।বেশি আর্টিফিসিয়াল হয়ে যাওয়ার আগেই যারা সি বিচ দেখতে চান তারাও যেতে পারেন এইখানে।কুয়াকাটায় গিয়ে এই ফিলিংস টা পেয়েছি।

তাই যারা সারা সপ্তাহের ক্লান্তি কাটাতে উইকেন্ডের দুই দিন ইট পাথরের শহর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কাটা চান তাদের জন্য এই ট্যুর প্ল্যানটা করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেনঃ

বেশ কয়েক ভাবে যাওয়া যায়। সদর ঘাট থেকে প্রতিদিন ৮-৯ টার মধ্যে বেশ কিছু লঞ্চ বরিশাল এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়। সেই লঞ্চ এ করে প্রথমে বরিশাল লঞ্চ ঘাট যেতে হবে। তারপর একটা অটো নিয়ে রুপতলী বাস স্টেশন এ যেতে হবে। সেখান থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্য বেশ কিছু লোকাল বাস ছেড়ে দেয়। যে কোণ একটায় উঠে পড়েন। সেই বাসই আপনাকে নামিয়ে দিবে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট বিচে।

এছাড়া লঞ্চে করে পটূয়াখালী তে যেতে পারেন, সেখান থেকে বরিশালের তুলনায় আরো কম সময়ে চলে যেতে পারবেন কুয়াকাটা বিচে।

এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্য বেশ কিছু বাস ছেড়ে দেয়, সেই বাসে সরাসরি যেতে পারেন কুয়াকাটা। এক্ষেত্রে দুইটা ফেরি ঘাট পার হতে হবে।

প্রথম রাতঃ ঢাকা থেকে সদর ঘাট এ গিয়ে বরিশাল/পটূয়াখালীর লঞ্চে উঠে পড়েন, ৯ -১০ ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাবেন বরিশাল অথবা পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে করে কুয়াকাটায় চলে যাবেন। বরিশাল থেকে বাসে গেলে ১১ টা থেকে ১২ টার মাঝে পৌছে যাবেন কুয়াকাটায়।

প্রথম দিনঃ হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন। বেশি সময় নিবেন না কারন অলরেডী হাফ ডে চলে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি চলে যাবেন জিরো পয়েন্ট বিচের কাছের মোটর বাইক ষ্টেশনে। একটা মোটর বাইক রিজার্ভ করে নিন। তাকে বলবেন গঙ্গামতীর চর পেরিয়ে যেন লাল কাকড়ার চরে নিয়ে যায়। সাধারনত বেলা ১১ টার পরেই চমৎকার লাল কাকড়াগুলো রোদ পোহাতে বের হয় সেখানে। অজস্র লাল কাকড়া বিচ দিয়ে রোদ পোহাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে, দেখলেই আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। সেখান থেকে ফিরে চলে যান জিরো পয়েণ্ট বা মেইন বিচে। ঝাপিয়ে পড়ুন উত্তাল সমুদ্রের বুকে, মজা করুন, ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিন বিচের ছাতাওয়ালা বিছানাগুলোয়। কিছু সময় বিচে কাটিয়ে হোটেলে চলে আসুন। নামায, লাঞ্চ সেরে কিছু সময় বিশ্রাম নিন অথবা আবার চলে যেতে পারেন মেইন বিচে। তবে মনে রাখবেন বিকালটা কিন্তু কাটাতে হবে লেবুর চরে।

মোটামুটি দুই ঘন্টা হাতে নিয়ে যান অর্থাৎ সূযাস্ত যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে যাত্রা শুরু করুন। চাইলে মোটরেও যেতে পারেন, বিচ ঘেষে নিয়ে যাবে। অথবা চাইলে ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে করে যেতে পারেন। কিছু দুর রাস্তা খারাপ থাকলেও সময়টা ভাল লাগবে। মোটরে করে চলে যান লেবুর চরের শেষ মাথায়। সেখান থেকে আন্ধার মানিকের তিন নদীর মোহনা দেখে আবার চলে আসেন লেবুর চরে। সেখানকার শ্বাসমূল গাছগুলার সজ্জা আসলেই সুন্দর। কিছু সময় হেটে কাটিয়ে দিন। একমাত্র লেবুর চরেই দেখেছি বেশ কিছু দোকান তাজা মাছ নিয়ে ফ্রাই করে দেওয়ার জন্য থাকে। দেখে শুনে পছন্দ করা মাছ অল্প সময়ের মধ্যে তারা ফ্রাই করে দিবে। কিছু তাজা মাছ খেয়ে অপেক্ষা করুন সূর্যাস্ত দেখার জন্য। অপরুপ সূর্যাস্ত দেখে চলে আসুন আবার আপনার হোটেলে। সন্ধ্যা থেকে রাত কাটিয়ে দিন মেইন বিচে।তারপর ডিনার করে হোটেলে ফেরত।

ওহ! আসল কথাই বলা হয়নি। সূর্যাস্ত তো দেখা হল, কিন্তু সূর্যোদয়। তার তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য আজকে রাতেই একটা মোটরকে রিজার্ভ করে রাখবেন। তাকে বলে রাখবেন, পরের দিন সকালে গঙ্গামতীর চরে যাবেন সূর্যোদয় দেখতে। সবকিছু ফিক্স করে তাড়াতাড়ি চলে যান ঘুমের রাজ্যে।

ঝাপিয়ে পড়ুন উত্তাল সমুদ্রের বুকে, মজা করুন, ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিন বিচের ছাতাওয়ালা বিছানাগুলোয়

ঝাপিয়ে পড়ুন উত্তাল সমুদ্রের বুকে, মজা করুন, ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিন বিচের ছাতাওয়ালা বিছানাগুলোয়

দ্বিতীয় দিনঃ

যদি ৬ টায় সূর্য উঠে তবে ঘুম থেকে উঠে পড়ূন ৪ঃ৩০ এ। এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে প্রস্তুতি নিয়ে নিন। দেখবেন ৫টার মধ্যেই আগে থেকে রিজার্ভ করে রাখা মোটর চালক আপনাকে কল দিবে । সে অলরেডী আপনার হোটেলের নিচে এসে অপেক্ষা করছে। চলে যান নিচে। এইবার মোটরে করে গঙ্গামতীর চরের উদ্দেশ্যে বিচের পাড় ধরে রাতের বেলায় মোটর করে যাত্রা শুরু করে দিন। গিয়ে দেখবেন আপনার মত শত শত লোক চলে এসেছে গঙ্গামতীর চরে। অপেক্ষা করুন সেই পরম সময়ের জন্য। সেখানে সূর্যোদয় দেখা হয়ে গেলে সেই মোটরকে বলে ঘুরে আসতে পারেন আরো কিছু জায়গা। যেমন কাউয়ার চর, রাখাইন পল্লী, লাল কাকড়ার চর, কুয়াকাটার কুয়া, মিষ্টি পানির কুয়া। বৌদ্ধ মন্দির। ঘুরে তাড়াতাড়ি চলে আসেন মেইনবিচে। এইবার চলে এসেছে রিভার ক্রুজিং এর পালা। যেতে হবে ফাতরার বন, শুটকি পল্লী। এরজন্য টিকিট কাটতে হবে মেইন বিচের আগের রোডে একটা ট্যুরিষ্ট স্পট থেকে। মোটামুটি ৪ ঘন্টার ব্যাপার। যে ট্রলারে যাবেন তার ইঞ্জিন থেকে কিছু দূরে বসলে খুব চমৎকার সময় কাটবে। শুটকি পল্লী, ফাতরার বন ,আরেকটা লাল কাকড়ার চর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে এই ট্রলার।

এই ক্রুজিং শেষ করে ফেরত আসবেন মেইন বিচে। হোটেল থেকে চেক আউট হয়ে যান। এরপর ফেরার পালা।

কেমন খরচ হতে পারেঃ

খরচ আসলে ফিক্সড কিছু না, রাফ আইডিয়া দেওয়া যায়, যেমন বরিশাল এর লঞ্চে গেলে ২৫০ টাকা ডেক ভাড়া আবার ১০০০-৫০০০ টাকার কেবিন ও আছে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটার বাস ভাড়া ২৫০ টাকা।হোটেল এর ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০। আবার ফাইভ স্টার নামের হোটেলে গেলে নাকি ১০০০০ ও হতে পারে।

মোটর বাইক বা ভ্যানে লেবুর চর- ২০০-৪০০ টাকা।

মোটর বাইক এ করে গঙ্গামতীর চর ( সবগুলো স্পটসহ)- ৫৩০ টাকা।

ট্রলারে করে ফাতরার বনের উদ্দেশ্যে ক্রুজিং- ২৮০ টাকা পার পার্সন।

খাওয়া দাওয়া ১০০-১৫০ টাকা পার পার্সন পার বেলা।

তথ্যসূত্রঃ ট্র্যাভেলারস অফ বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক

You have successfully subscribed to the newsletter

There was an error while trying to send your request. Please try again.

Living Art Style will use the information you provide on this form to be in touch with you and to provide updates and marketing.