ঢাকার আশেপাশে ক্যাম্পিং

ঢাকার আশেপাশে ক্যাম্পিং

ভ্রমণের আসল মজাই ক্যাম্পিং-এ। শহর থেকে বেরিয়ে পড়লেন সব ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তাকে পেছনে ফেলে। মোবাইল বন্ধ করে তাবু টাঙ্গিয়ে, পাশে আগুন জ্বালিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকা। পরিষ্কার আকাশ, আকাশ ভরা তারা। ভাবুন তো, আর কিছু কি লাগে জীবনে? অথবা নামলো ঝুম বৃষ্টি। আপনাকে কারও জন্য ভাবতে হচ্ছে না, কেউ ভাবছে না আপনার জন্য। একেবারেই বন্ধনহীন একটা সময়। নাটকীয় হলেও ভাবুন তো অনুভূতিটা কেমন হবে?

এবার তাহলে একটা ট্রিপ প্ল্যান করেই ফেলুন। ঠিক করে ফেলুন কোথায় যাবেন। একা যেতে পারেন, যেতে পারেন বন্ধুরা দল বেঁধে। আর তা যদি হয় ঢাকার আশে পাশে তাহলে ত কথাই নেই।

১। বালুনদীঃ ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলশান নতুন বাজার বালুনদীর তীরেই  রয়েছে ভ্রমণাসক্তের ক্যাম্পিং সাইট।

নতুন বাজার ভাটারা থানা পাশে থেকে সিএনজিযোগে মাত্র ২০ মিনিট এর পথ বেরাইদ, ৩০ ফুট রাস্তায় ক্যাম্পিং সাইট। ঢাকার এত কাছেই রাতে ক্যাম্পিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে বারবিকিউসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার।

যেভাবে যেতে হবেঃ

ঢাকা সিটির যেকোন জায়গা থেকে গুলশান নতুন বাজার ভাটারা থানার পাশে থেকে লোকাল সিএনজি/ অটোরিকশা  পার পারসন ২০/২৫ টাকা খরচে ১০০ ফুট রাস্তার শেষ মাথায় বালুনদী সংলগ্ন ৩০ ফুট রাস্তার গ্রিন পার্ক রেস্টুরেন্ট।

২। ৩০০ ফিটঃ ঢাকার ভিতরেই ৩০০ ফিট এ করতে পারেন ক্যাম্পিং ট্রিপ। 

যাওয়ার উপায় – কুড়িল থেকে বাসে সেক্টর ৯ বাসস্ট্যান্ড (নিলা মার্কেটের পরে)। এরপর অটোতে হ্যালিপ্যাড চত্ত্বর (১০ টাকা) 

৩। আড়াইহাজারঃ নদীর জলে আকাশ ভরা পূর্ণিমার আলোর সৌন্দর্য্য বর্ণনাতীত। এ শুধু দেখবার, এ শুধু অনুভবের। তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বালুময় প্রান্তর। মাঝখানের নির্জন চরে বসে রুপালি জোছনার আলোতে ভেসে যাবেন অন্যরকম এক মায়াজালে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের পদভারে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দি ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামটি এখন সবাই তাই ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে চেনে। যারা চর অঞ্চল ভ্রমণ করতে চান তারা উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ১৪ টি গ্রামের যে কোন একটি গ্রামে ভ্রমণ করতে পারেন, সাথে ক্যাম্পিং। বিশেষ করে খালিয়ারচর, রাধানগর, কালাপাহাড়িয়া, কদিমচর, খাগকান্দা গ্রাম গুলো ক্যাম্প করার জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়া অন্যান্য যে কোন জায়গায় ক্যাম্প করা যাবে কিন্তু অবশ্যই স্থানীয় লোকদের অনুমতি সাপেক্ষে। কেউ ইচ্ছে করলে বিশাল ট্রলার ভাড়া নিয়ে ভেসে বেড়াতে পারেন মেঘনার বুকে। রাতে থাকতে পারেন ওই ট্রলারেই। ঘুরতে ঘুরতে দেখবেন নদীর পাশের মানুষের জীবন ধারা, জেলেদের মাছ ধরা, পাশে দিয়ে ছুটে চলা শত শত জাহাজ, হঠাৎ করেই পাশ থেকে নেমে আসবে রাজ হাঁস, দেশি হাঁসের ঝাক, উড়তে থাকে নানা প্রজাতির পাখি। এক অপরুপ দৃশ্য যা আপনার মন ভোলাতে বাধ্য করবেই। বছরের যে কোন মৌসুমেই ভ্রমণ করতে পারবেন তবে বিশেষ করে চর অঞ্চলের ভ্রমণ স্বাদ নিতে চাইলে বর্ষা কাল সবচেয়ে উপযোগী সময়। 

কীভাবে যাবেনঃ

ঢাকার গুলিস্তান থেকে আড়াই হাজার/গোপালদীর সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। এছাড়াও গুলিস্তান থেকে মদনপুর নেমে ভিতর দিয়েও বাস/সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সাথে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য শহর থেকে এই উপজেলায় আসতে হলে ঢাকা হয়েই আসতে হবে।

আড়াইহাজার থানার মোড় থেকে সিএনজিতে খাগকান্দা ঘাট ৪০ টাকা। ঘাটের সাথেই চউদ্দার চর দেখা যায়। লোকাল ট্রলারে ২০ টাকা নিবে। তাছাড়া ট্রলার রিসার্ভ নিয়ে মন মতো ঘুরতে পারেন। আকার, ধরন ভেদে ২০০-৪০০ টাকা ঘণ্টা নিবে।

৪। দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশঃ গাজীপুর জেলায় অবস্থিত বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ ভ্রমণচারীদের নিকট অতটা পরিচিত নয়। সত্যি বলতে এটি, বেসরকারী উদ্যোগে আউটডোর এক্টিভিটিসের জন্য উৎসর্গকৃত দেশের প্রথম কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত ক্যাম্প।

রোপ ক্লাইম্বিং, সাইক্লিং, আর্চারিসহ মোটামুটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সবধরনের আউটডোর এক্টিভিটিসের সুবিধা পাবেন এখানে। সবচেয়ে বড় সুবিধা বেসক্যাম্প বাংলাদেশ ঢাকার সন্নিকটে। ক্যাম্পিং, লিডারশিপ ট্রেনিং, কর্পোরেট ট্রেনিং ছাড়াও প্রথাগত ভ্রমণের বাইরে যে যে এক্টিভিটিস অফার করা প্রয়োজন তার অনেক কিছুই অফার করছে দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ।

তাই আর দেরি কেন যেকোন ছুটির দিনে রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিতে উপভোগ করুন ক্যাম্পিং।

সাম্প্রতিক