বিয়েতে মেয়েদের সাজসজ্জা

বিয়েতে মেয়েদের সাজসজ্জা

বাঙালীর কাছে বিয়ে এক উৎসবের নাম। বিয়ে নিয়ে সবারই থাকে হাজারো প্লান, হোক তা নিজের বিয়ে, নিকটাত্মীয় বা কাছের বন্ধুর বিয়ে। বিয়ের অতিথি হিশেবে পোশাক কেমন হবে, সাজগোজ কেমন হবে এসব নিয়ে থাকে হাজারো পরিকল্পনা। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজেকে জমকালোভাবে উপস্থাপন করতে সবাই যেন খুব ব্যস্ত। আর মেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়। 

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েদের পদচারণা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনই অনেকগুণে বেড়েছে ফ্যাশন সচেতনতা। পোশাকের রঙ, ডিজাইন, সাজের ধরণ সবকিছু নিয়েই হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ব্রাইডমেইডস হোক বা বিয়ের সাধারণ অতিথি, গর্জিয়াস লুকে নিজেকে সবার মাঝে একটু ভিন্নধাঁচে তুলে ধরতে কে না চায়!

তো চলুন জেনে নেয়া যাক বিয়ের দাওয়াতে কিভাবে চমৎকারভাবে নিজেকে তুলে ধরবেন-

কেমন হবে পোশাক?

কোন ধরণের পোশাক পরে বিয়েতে যাচ্ছেন এটা সব থেকে বেশী জরুরি। বিয়ের অতিথি হিসেবে অনেকের প্রথম পছন্দ শাড়ি। যে কোন বয়সী ও যে কোন বর্ণের মেয়েদেরই চমৎকার মানিয়ে যায় শাড়িতে। বিয়ের দাওয়াতে অনায়াসে পরতে পারেন কাতান, বেনারসী, জামদানি বা মসলিনের মতো শাড়িগুলো। বিয়ের অনুষ্ঠান রাতে হলে বেছে নিতে পারেন ডার্ক শেডের রংগুলো, যেমন- লাল, নীল, বেগুনী, মেরুন বা সবুজের মতো রঙ। আবার দিনের বিয়েতে ম্যাজেন্টা, গোলাপি, আসমানি ইত্যাদি রঙের শাড়িতে দারুণ মানাবে যে কাউকে। এছাড়াও পিচ, কোরাল বা অফ হোয়াইটের মতো রঙ্গগুলো পরতে পারেন দিন-রাত যেকোন আয়োজনে। বিয়ের দাওয়াতে পরার জন্য ট্রেন্ডি শাড়ি এখন সেকুইন। হালকা বা গাঢ় যেকোন কালারের সেকুইন শাড়ি যেকোন বয়সী নারীর গর্জিয়াস লুক তৈরি করতে পটু। 

শাড়ি ছাড়াও অনেকে পার্টি ল্যাহেঙ্গা বা শারারা জাতীয় পোশাক পরতে পছন্দ করেন। নেট বেইসের উপর চুমকি পুতির সিকোয়েন্সের কাজ আপনাকে এনে দেবে একটি গর্জিয়াস লুক। একটু ভিন্নধাঁচের পোশাক শারারাতেও তরুণীরা হতে পারেন আয়োজনের মধ্যমণি। এই পোশাকটি ক্যারি করা যেমন সহজ, ঠিক তেমনই আপনাকে দিবে এলিগেন্ট একটি লুক। 

এছাড়াও হালের ফ্যাশন ট্রেন্ড হিশেবে পরতে পারেন শেরওয়ানি। কি? খুব অবাক লাগছে? ভাবছেন ছেলেদের পোশাকের কথা কেন বলছি? ছেলেদের পোশাক হিশেবে আর আবদ্ধ নেই শেরওয়ানি। ডিজাইনের সামান্য ভিন্নতায় মেয়েদের ফ্যাশন ট্রেন্ডে যুক্ত হয়েছে দারুণ গর্জিয়াস এই পোশাকটি। মেয়েদের শেরওয়ানির উপর দিকে সিম্পল এবং নিচের দিকে থাকছে কারুকাজ। সেইসাথে নিচের দিকের কাট হবে ওভাল। আবার ফিউশন হিশেবে অনেকে সামনে ছোট এবং পেছনে লম্বা কাটের ওভাল ডিজাইন করতে পারেন। 

শেরওয়ানির সাথে সবথেকে ভালো মানায় প্যান্ট। কাতান কাপড়ের শেরওয়ানি ও কাতানের প্যান্টে আপনাকে দেখতে লাগবে আধুনিকা। যারা একটু পরিপাটি লুক পছন্দ করেন তারা অনায়াসে পরতে পারেন শেরওয়ানির সাথে প্যান্ট। এই পোশাকের সাথে সাধারণত ওড়না পরতে হয় নেট বা শিফনের। একটু ভারি কাপড়ের ওড়না পরতে চাইলে শালের মতো করে পরতে পারেন। আবার নেটের ওড়নায় কাতানের মোটা পাড়ের প্যাচওয়ার্কেও অসাধারণ লুক তৈরি হবে। 

এছাড়াও সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন শিফন বা নেট কাপড়ের। এখন লম্বা কামিজের জায়গায় আবারও সেই শর্ট কামিজের চল শুরু হয়েছে। সিম্পল এলিগেন্ট লুক পেতে সালোয়ার কামিজের কোন জুড়ি নেই।

কেমন হবে সাজগোজ?

বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় ও পোশাকের ধরণের উপর নির্ভর করে সাজপোশাক কেমন হবে। যদি আপনি রাতের দাওয়াতে যান তাহলে অবশ্যই আপনার সাজ হবে গর্জিয়াস। শাড়ি, লেহেঙ্গা, শারারা বা শেরওয়ানি যাই পরুন না কেন, আপনাকে করতে হবে হাই-এন্ড পার্টি মেকআপ। চোখের সাজ আর ঠোঁটের সাজে ফোকাস দিতে পারেন। চোখে স্মোকি আইজ করলে সবথেকে সুন্দর হয়। তবে অনেকের চোখেই স্মোকি মেকআপ মানায় না। সেক্ষেত্রে ডার্ক শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন আর তার সাথে গ্লিটার। যেহেতু মেকআপ একটু গাঢ় হবে তাই ঠোঁটে ব্যবহার করুন মেরুন, রেড ওয়াইন, ডার্ক কফির মতো শেডগুলো। এছাড়াও হাইলাইটারের ব্যবহারে হতে হবে সতর্ক। আপনার স্কিন টোন যদি একটূ ডার্ক শেডের হয়ে থাকে তাহলে গোল্ডেন কালারের হাইলাইটার বেছে নিন। অপরদিকে, আপনার স্কিনটোন যদি লাইট শেডের হয়ে থাকে তাহলে শিমারি কালার বেছে নিতে পারেন। 

আবার দিনের বিয়েতে গর্জিয়াস এবং এলিগেন্ট লুক পেতে সাজে থাকতে হবে স্নিগ্ধতা। পিচ, কোরাল বা গোলাপির মতো রঙ বেছে নিতে পারেন এক্ষেত্রে। বেস মেকআপের দিকে খুব ভালোভাবে নজর দিতে হবে। কারণ দিনের বেলা রোদের তাপে মেকআপ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে। তাই উন্নতমানের মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করুন। লিকুইড বেসড মেকআপ দিন-রাত যেকোন সময়ের জন্য দারুণ কার্যকর।  

চুলের সাজের ট্রেন্ড কেমন?

ট্রেন্ডি শাড়ি বা গর্জিয়াস পোশাকের সাথে আধুনিক মেকআপ তো হলোই। কিন্তু চুল সামলাবেন কিভাবে? বিয়েতে গর্জিয়াস লুক পেতে চুলের সাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুলের সাজ কিভাবে করবেন তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। তবে পোশাকের ধরন আর মুখের গড়নের সাথে মিল রেখে যদি চুলের সাজ নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আপনিই হয়ে উঠবেন অনন্যা।

চলুন জেনে নেই পোশাকের ধরন আর মুখের গড়নের সাথে মিল রেখে কিভাবে চুলের স্টাইল বেছে নিবেন-

যারা লম্বাটে মুখের অধিকারি তাদের চুল খোলা রেখে যেকোন স্টাইল করলে মানিয়ে যাবে। কারণ লম্বা মুখকে খানিকটা কম লম্বা দেখাতে খোলা চুল দারুণ ভূমিকা পালন করে। চুল যদি ছোট বা মাঝারি হয় তাহলে স্ট্রেইট করে ছেড়ে রাখতে পারেন। সামনের দিকে অবশ্যই ফ্রিঞ্জ কাটতে হবে। সামনের চুল পাফ করে ববি পিন দিয়ে আটকে গুঁজে দিতে পারেন আর্টিফিশিয়াল ফুল। আবার লম্বা মুখে যদি চুল বাধতেই চান তাহলে করতে পারেন ফ্রেঞ্চ খোঁপা। দারুণ সুন্দর এই খোঁপার এককোণে গুঁজতে পারেন ফুল বা ক্রিস্টালের কাঁটা। শাড়ির সাথে ফ্রেঞ্চ খোঁপা খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায়।

যাদের চুল লম্বা তারা সামনের সিকে পাফ করে নিয়ে ফেছনে লং কার্ল করতে পারেন। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, লেহেংগা বা অন্য যেকোন পোশাকের সাথেই দারুণ মানিয়ে যাবে।

গোলগাল মুখ যাদের তারা বিভিন্ন ধরণের খোঁপা করতে পারেন। খোঁপায় বিভিন্ন ফুলের ব্যবহার সাজে স্নিগ্ধতা আনবে। এছাড়া চুল খোলা রাখতে চাইলে লং কার্ল সবথেকে স্টাইলিশ অপশন হতে পারে।

ওভাল বা চৌকো মুখের অধিকারীদের খোলা চুলে এলিগেন্ট লাগবে দেখতে। খোলা চুলে তাই করে নিতে পারেন হরেক রকম স্টাইল। 

কেমন হবে গয়নাগাটি?

গর্জিয়াস মেকাপকে আরও গর্জিয়াস করে তুলতে গয়নার কোনো বিকল্প নেই। আর বিয়ের দাওয়াত মানেই গয়নার ব্যবহার। পোশাকের ধরণ অনুযায়ী বাছাই করতে হবে গয়না। সেই সাথে মাথায় রাখতে হবে আপনার বয়স। তো চলুন দেখে নেই বিয়ের দাওয়াতে কেমন গয়না মানানসই হবে-

কিশোরি থেকে তরুণী সবার প্রথম পছন্দ হালকা ধাঁচের ফ্যাশনেবল গয়না। আবার মধ্যবয়সীরা পছন্দ করেন একটু ভারি গয়না পরতে। আবার বয়স একটু বেড়ে গেলে গয়নায় আনতে হয় সরলতা। তবে এখন ফ্যাশন ট্রেন্ড বদলেছে, বদলে গেছে গয়নার ডিজাইন আর পরার ধরণ। পোশাকের সাথে মিল রেখেই সবাই বেছে নিচ্ছেন পছন্দের গয়নাটি। 

যদি বিয়েতে শাড়ি পরেন তাহলে গয়নায় থাকবে অনেক বৈচিত্র্য। জামদানি, মসলিন বা সেকুইন শাড়ির সাথে পরতে পারেন মুক্তা ও হীরের গয়না। আবার কাতান, বেনারসী শাড়ির সাথে বেছে নিতে পারেন কুন্দন বা পাথরখচিত জড়োয়া গয়না। অন্যদিকে, লেহেঙ্গার সাথে কুন্দনের বড় ঝুমকা পরতে পারেন। বড় কানের দুল পরলে গলায় পরতে হবে সিম্পল কোন পেন্ডেন্ট। আবার ডায়মন্ড কাটের গয়না বা কুন্দনের সেট পরলেও মানিয়ে যাবে বেশ। শেরওয়ানির সাথে পরতে হবে জাকজমক জড়োয়া গয়না। সালোয়ার কামিজের সাথে ম্যাচিং বড় দুল মানিয়ে যায় বেশ। সোনার গয়না পরতে পারেন সব ধরণের পোশাকের সাথেই, যদি আপনার পোশাকে থাকে গোল্ডেন আভা। 

জুতা ও অনুষংগ নিয়ে ভেবেছেন কি?

সাজগোজে পূর্ণতা দেয় জুতা ও অনুষঙ্গ। যেকোন ধরণের পোশাকের সাথেই হাই হিল মানিয়ে যাবে। আর শাড়ির সাথে একটু হিল ছাড়া তো চলেই না। তবে শেরওয়ানির সাথে আপনাকে বেছে নিতে হবে পেন্সিল হিল। এছাড়াও পেশওয়ারি জুত্তির এখন রয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। চাইলে তাও পরতে পারেন। আর সবশেষে ক্লাচ বা বটুয়া নিতে ভুলবেন না যেন!

সাম্প্রতিক