শীতে ত্বক সুরক্ষায় পেট্রোলিয়াম জেলি

শীতে ত্বক সুরক্ষায় পেট্রোলিয়াম জেলি

শীতকালে রুক্ষ ত্বক থেকে বাচা যেন প্রায় অসম্ভব। তাই এসময় ত্বক কোমল রাখতে প্রয়োজন হয় বাড়তি পরিচর্জা। তাছাড়া শীত ছাড়াও অন্য বিভিন্ন কারনে ত্বক আর্দ্রতা হারাতে পারে। যেমন বংশ বা জিনগত কারণে, বয়স চল্লিশ পেরোলে তেল ও ঘাম গ্রন্থির সংখ্যা কমে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে।  ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে, বিশেষ করে গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে, ধূমপান, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণ, আকাশপথে বেশি ভ্রমণ শুষ্ক ত্বকের কারণ। ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’ এবং জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। একটু নিয়মিত ত্বক সুরক্ষায় সচেতন হয়ে  ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে রুক্ষ ত্বক থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।  আর এই ত্বক কোমল রাখার প্রতিদিনের পরিচর্জায় ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলি রাখতে পারে একটি বড় ভুমিকা।

 পেট্রোলিয়াম জেলি হলো হাইড্রোকার্বন। আর হাইড্রোকার্বন হলো হাইড্রোজেন ও কার্বনের যৌগ বা অণু। গাড়িতে যে পেট্রল, অকটেন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় টা হল হাইড্রোকার্বন। আমরা যে মিথেন গ্যাস জ্বালাই, সেটিও হাইড্রোকার্বন। খাবারের তেল এমনকি মোমও হাইড্রোকার্বন। পেট্রোলিয়াম জেলিতে বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোকার্বন অণু থাকে। হাইড্রোকার্বন অণুগুলোর একটি বিশেষ ধর্ম হলো, এগুলো পানির সঙ্গে মেশে না। পানির অণুর সঙ্গে কোনো প্রকার আকর্ষণ বল কাজ করে না। বিজ্ঞানে একে বলা হয় হাইড্রোফোবিক ইন্টারাকসান বা জলানিরাসক্তি। সে জন্যই পানিতে তেল দ্রবীভূত হয় না। ত্বকে, পেট্রোলিয়াম জেলি একটি আবরণের মতো কাজ করে। ত্বকের কোষে যে পানি থাকে, তা বাষ্পীভূত হতে পারে না। ফলে ত্বক শুষ্ক হয় না।

একসময় পেট্রোলিয়াম জেলি খুব বেশী সহজলভ্য ছিল না। মানুষ ত্বকের যত্নে তেল ব্যবহার করত। বাংলাদেশে নারিকেল ও সরিষার তেল একসময় বহুল প্রচলন থাকলেও বর্তমানে কম বেশী সবাই পেট্রোলিয়াম জেলিই ব্যাবহার করে। আজ আলোচনা করবো পেট্রোলিয়াম জেলির কয়েকটি ব্যাবহার সম্পর্কে।

১।  শীতকালে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হাড়ায়। তাই খেয়াল না রাখলে খুব সহজেই রুক্ষ হয়ে যেতে পারে ত্বক। তাই কিছু সময় পর পর পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাবার আগে পেত্রলিয়াম জেলির ব্যাবহার ত্বক কোমল রাখাতে কার্যকরী হবে।

২। শীতের প্রকোপে ঠোঁট অল্পতেই শুষ্ক হয়ে যায়, এমনকি ফেটেও যেতে পারে। এ কারনে ঠোটের জন্য প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। এ কারনে ঠোট রুক্ষ হওয়ার আগেই পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যাবহার অপরিহার্য।

৩। শীতকালে অনেক সময়ে ত্বক এতটাই শুষ্ক হয়ে যায় যে গায়ে নখ দিয়ে আঁচড় কাটলে খড়ি উঠে যায়। সেক্ষেত্রে ত্বককে কোমল বানাতে পেট্রোলিয়াম জেলি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে যদি ফেটে যায় তাহলেও সেই স্থানেও পেট্রলিয়াম জেলি লাগালে নিরাময় লাভ করা যাবে।

ঠোট মোলায়েম করতে জেলির ব্যবহার

৪। গোসলের পর ভালো করে শুষ্ক ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। হালকা ম্যাসাজ করে লাগাবেন যাতে এটি ভালো ভাবে স্কিনের ভিতরে প্রবেশ করে। পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যাবহার ২৪ ঘণ্টা  স্কিনকে নরম রাখতে সাহায্য করে।

৫। আমরা জানি একটি আদর্শ স্কিন কেয়ার রুটিনে, নাইটক্রিম অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যাবহার করা যেতে পারে নাইটক্রিম হিসাবেও। একটা আদর্শ নাইটক্রিম যা যা কাজ করে ভ্যাসলিনও তাই করে। কারণ ঘুমানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি অ্যাপ্লাই করলে তা ত্বকের আর্দ্রতা লক করে রাখে।

৬। হাতের ত্বক শরীরের অন্য যেকোনো অংশের থেকে পাতলা হওয়ায় শীতে এর অবস্থাও হয় করুন। এ কারনে হাত সবার আগে রুক্ষ হওয়া শুরু করে। নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যাবহার আপনাকে অমসৃণ ও রুক্ষ ত্বক থেকে রাখবে সুরক্ষিত। খেয়াল না রাখলে পা এর ত্বকও আর্দ্রতাহীন ও রুক্ষ হয়ে যায়। বাহিরে

যাওয়ার আগে অথবা গোসল করার পরে পা এ পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যাবহারে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। শীতে রুক্ষতার কবলে পরা স্বাভাবিক। তবে ভয়ের কিছু নেই। যথা সময়ে যত্ন নিলে শীতকালে ও কোমল ত্বক বজায় রাখা সম্ভব।

সাম্প্রতিক