চুলের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি

চুলের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি

শীতকালে রুক্ষ ত্বকে আদ্রতার কোমল পরশ পেতে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার বহুল প্রচলিত। প্রাকৃতিক মোম আর খনিজ তেলের মিশ্রণে তৈরি এই জেলি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে এবং ত্বক ফাটা দূর করতে একটি সুরক্ষিত লেয়ারের বেষ্টনী তৈরি করে। ত্বককে হেলদি রাখার পাশাপাশি নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও দারুণ কার্যকর এই পেট্রোলিয়াম জেলি। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্নেও দারুণ কার্যকর এই পেট্রোলিয়াম জেলি। চলুন দেখে নেই কিভাবে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে চুলকে করা যায় আরও লম্বা ও ঝলমলে-

পেট্রোলিয়াম জেলির যত গুণ

পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে ত্বকে যে বেষ্টনী তৈরি করে তা ত্বকের রুক্ষতা দূর করে আর ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। তাই এই জেলি মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ফলে চুলের গোড়া হবে মজবুত আর চুল পড়ার পরিমাণও কমে আসবে। 

চুলের শুষ্কতা কমিয়ে চুলের আগা ফাটা রোধ করতেও সাহায্য করে পেট্রোলিয়াম জেলি। এছাড়াও রুক্ষ চুলে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার চুলকে করে ঝলমলে। আবার চুলকে আরও লম্বা করতেও ব্যবহার করতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলি।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

চুলের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি একাধিকভাবে ব্যবহার করা যায়। উপকারের উপর নির্ভর করে ব্যবহারের ধরণে আসে ভিন্নতা। তবে মাথার ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারের আগে আপনাকে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণে পেট্রোলিয়াম জেলি মাথার ত্বকের একটি নির্দিষ্ট অংশে লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে দিয়ে লক্ষ্য করুন আপনার ত্বকে কোনো ধরণের অ্যালার্জির আবির্ভাব হয়েছে কিনা। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তবেই আপনি চুলের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারবেন।

চুলের গোড়া মজবুত করতে

চুলের গোড়া দূর্বল মানেই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগতে হয়। অনেক সময় চুল পড়তে পড়তে অনেক বেশী পাতলা হয়ে যায়। অনেকের আবার টাক দেখা যায় অতিরিক্ত হেয়ারফলের কারণে। চুলের গোড়া মজবুত রাখা চুল পড়া কমানোর একটি মোক্ষম উপায়, যা হতে পারে পেট্রোলিয়াম জেলির কল্যাণে। 

আঙ্গুলের আগায় সামান্য পরিমাণে পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মালিশ করুন প্রতিদিন গোসলের আগে। ১০-১৫ মিনিট পর ইষদুষ্ণ (হালকা গরম) পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হবে।

মাথার ত্বকে আদ্রতা বজায় রাখতে ও খুশকি কমাতে

অবাক করা কথা হলেও সত্যি যে, পেট্রোলিয়াম জেলির প্রধান গুণ ময়েশ্চার লক করা হলেও এর নিজস্ব কোনো ময়েশ্চারাইজিং গুণাবলি নেই। একটি সুরক্ষিত বেষ্টনী তৈরি করার মাধ্যমেই এটি কেবল আদ্রতাকে আটকে রাখে আর বাইরের বাতাস ত্বকে ঢুকতে দেয় না। তাই মাথার ত্বকের আদ্রতা বজায় রেখে স্কাল্পের রুক্ষতা ও মৃত চামড়ার উপস্থিতি কমাতে ব্যবহার করতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলি। স্কাল্পের রুক্ষতা কমিয়ে ফেলতে পারে বিধায় খুশকি কমাতেও দারুণ কার্যকর এই পেট্রোলিয়াম জেলি। 

৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল হালকা গরম করে তার মধ্যে আধা চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি ও ২/১ ফোঁটা রোজমেরি এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে মাসাজ করুন। ঘন্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে সারারাতও রাখতে পারেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন এবং ম্যাজিক দেখুন।

চুলকে ঝলমলে করতে

শীতের দিনে চুলের রুক্ষতা বৃদ্ধি পায়। চুল হয়ে পড়ে মলিন ও উস্কোখুস্কো। এই সমস্যা সমাধানে পুরো চুলে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে নিন। ১০-১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।

চুলের বৃদ্ধিতে

চুলকে আরও লম্বা করতে পেট্রোলিয়াম জেলির জুড়ি মেলা ভার। চুল লম্বা করতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতেপারেন দুইভাবে। প্রথমত, হেয়ার মাসাজের সময় এবং দ্বিতীয়ত, হেয়ার মাস্কের সাথে।

হেয়ার মাসাজের সময় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে চাইলে ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল, ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১/২ চা চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি, ১/২ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল ও ২/৩ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে মাসাজ করুন। সারারাত চুলকে একটি নরম সুতি কাপড়ে পেচিয়ে রাখুন। সকালে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন নিয়মিত ব্যবহার করুন।

সপ্তাহে অন্তত ১ বার আপনার পছন্দের হেয়ারপ্যাকের সাথে ১/২ চা চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল খুব দ্রুত লম্বা হবে।

সাম্প্রতিক