ঠান্ডার দিনে উষ্ণ ঘর

ঠান্ডার দিনে উষ্ণ ঘর

শহর জাঁকিয়ে পড়ছে তীব্র শীত। সেই সঙ্গে রয়েছে কনকনে উত্তরে হাওয়া। আকাশে মাঝেমধ্যে রোদের উঁকিঝুঁকি দেখা গেলেও বেশিরভাগ সময়েই থাকছে মেঘাচ্ছন্ন কুয়াশার হিমেল পরশ। কনকনে ঠান্ডার দাপট থেকে বাঁচতে কেউ রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে বসে আগুনের সেঁক নিচ্ছেন আবার কেউ ভারী শীতপোশাকে জুবুথুবু হয়ে আছেন। 

এই শীতে কোনরকমে লেপের মধ্যে উষ্ণতা খোঁজার পরম সুখের কোন তুলনা হয় না। তবে ঘর যদি হয় হিমশীতল তাহলে লেপের মধ্যে থেকেও উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করা বৃথা। অনেকেই শীতের দিনে রুমহিটার ব্যবহার করেন। আবার মাসের শেষে মোটা অঙ্কের ইলেকট্রিসিটি বিল দেখেও হতাশ হন। কৃত্রিম এই পদ্ধতি যেমন ব্যয়বহুল ঠিক তেমনি ত্বকের জন্যও সমান ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে ঘরকে উষ্ণ রাখবেন চলুন জেনে নেই—

সকালের রোদ ধরে রাখুন

শীতের সকালে দরজা জানালা খুলে দিন। বিশেষ করে যে জানালা বা দরজা দিয়ে সরাসরি ঘরে রোদ পড়ে সেটি খুলে রাখুন। কারণ ঘর গরম রাখতে এবং ঘরে বিশুদ্ধ বাতাসের আনাগোনা করতে ভেন্টিলেশন খুব জরুরি। আজকাল প্রায় সব বাসাতেই থাই গ্লাসের জানালা হওয়ায় তা পুরো খোলার সুযোগ নেই। তাই অর্ধেক জানালা খুললেও পর্দা সরিয়ে রাখুন পুরোটাই। সম্ভব হলে জানালার বিপরীত দেয়ালে একটি আয়না বসান। এতে করে সূর্যের আলো আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে ঘরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে সাহায্য করবে। 

রাতে ঘরের তাপ ধরে রাখু

সকালের উষ্ণ তাপ রাতেও ধরে রাখতে আপনাকে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সূর্য ডোবার আগেই সব জানালা বন্ধ করে দিন। জানালায় ব্যবহার করুন ভারী পর্দা। এতে করে রাতেও ঘর থাকবে উষ্ণ। ঘরের দেয়াল বেশি সময় তাপ ধরে রাখতে পারে না। তাই অনেক সময় ভারী পর্দা ব্যবহারের পরেও ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দেয়ালে ঝোলাতে পারেন ছোট আকারের কিছু শতরঞ্জি বা ক্যানভাস। ঘরের শোভাবর্ধনের পাশাপাশি ঘরকে গরম রাখতে এর জুড়ি নেই। 

ঘরে রাখুন বুকশেলফ

ঘরের যে দেয়ালে রোদ পড়ে সেখানে রাখুন কাঠের বুকশেলফ। শেলফে সাজিয়ে রাখা বইগুলো খুব ভালোভাবে তাপ ধরে রাখতে পারে। ফলে দীর্ঘ সময় ঘর গরম থাকে।

মেঝেতে রাখুন কার্পেট

মেঝেতে ব্যবহার করুন মোটা কার্পেট। এতে মেঝের ঠান্ডা থেকে যেমনি বাঁচতে পারবেন, ঠিক তেমনি রোদের তাপ ধরে রেখে এই কার্পেট আপনার ঘরের মেঝেকেও গরম রাখবে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন নকশার চাটাই, মাদুর ও শতরঞ্জি পাওয়া যায়। পছন্দমতো কিনে নিতে পারেন তাও।

ঘর থাকুক উজ্জ্বল

কিছু উজ্জ্বল রঙ ঘরের তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই সম্ভব হলে শীতের আগে আগে ঘর রঙ করিয়ে নিতে পারেন। আবার ব্যবহার করতে পারেন উজ্জ্বল রঙের বেডশীট, বেডকভার আর পর্দা। এতে ঘর দেখতে যেমন আকর্ষণীয় লাগবে ঠিক তেমনি ঘরের তাপমাত্রা বেশি থাকবে। উজ্জ্বল রঙের মধ্যে বেছে নিতে পারেন কমলা, হলুদ, সোনালি বা লাল। এসব রঙের বিছানার চাদর বা পর্দাতে ঘর অনেক বেশি গর্জিয়াস লুক পায়। 

অন্যরকম ফেব্রিক্সের চাদর, পর্দা বা সোফার কুশন তো হলোই। ঘর গরম রাখতে ব্যবহার করতে পারেন হলুদ আলোর বাতি। এজন্য ঘরের কোণে রাখুন ল্যাম্প শেড। ঘরের শোভাবর্ধনের পাশাপাশি এই বাতি ঘর গরম রাখতেও সাহায্য করে। 

আসবাবের স্থান পরিবর্তন

ঘরের ভেতরে ঠান্ডা আসে দেয়ালের ভেতর দিয়ে।তাই দেয়াল সংলগ্ন আসবাবগুলোকে ঘরের ভেতরের দিকে প্লেস করে রাখুন। যেমন, কোনো টেবিল যদি দেয়ালে ঠেকানো থাকে তাহলে সেখানে বসে কাজ করলে আপনার শরীরে আরো দ্রুত ঠান্ডা সঞ্চারিত হবে। তাছাড়া কাঠ এমনিতেই তাপের কুপরিবাহী। তাই প্রয়োজনমতো আসবাবের স্থান পরিবর্তন করুন। এতে ঘরের লুক পরিবর্তন হবে, সে সাথে ঘরের উষ্ণতা ঘরেই থাকবে।

এছাড়াও ঘরের ফাঁকা জায়গায় ছোটখাটো আসবাব সাজিয়ে শূন্য জায়গা পূরণ করতে পারেন যাতে সেখানে বাতাসের আনাগোনা কমে যায়। টেবিলে জালিয়ে রাখতে পারেন সুগন্ধি মোমবাতি। শোবার খাটে যোগ করতে পারেন বিভিন্ন মাপের কুশন। আবার খাটে বেড কভারের বিপরীত রঙের কম্বল বিছিয়ে রাখলেও ঘর গরম থাকে। এভাবেই প্রাকৃতিক উপায়ে আপনিও আপনার ঘরকে গরম রাখতে পারেন এই শীতে। এতে যেমন ঘরের শোভা বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে, ঠিক তেমনি কোন ক্ষতি ছাড়াই ঘর থাকবে উষ্ণ ও আরামদায়ক।

সাম্প্রতিক